ডিজিটাল ক্যামেরা কিনতে হলে

অনেকেই জিজ্ঞেস করেন, “বল দেখি কোন ক্যামেরাটা কিনি ?”

ডিজিটাল ক্যামেরা দিন দিন সুলভ হয়ে পড়ছে। হাজার দশেক টাকায় বেশ ভালো ক্যামেরা পাওয়া এখন সহজ। বিভিন্ন ব্যা্রন্ডের ক্যামেরা সুলভ যেমন হচ্ছে, গুনগৎমান আর ফীচারও বাড়ছে তার সাথে পাল্লা দিয়ে।

অনেকেই জিজ্ঞেস করেন, “বল দেখি কোন ক্যামেরাটা কিনি ?” । আমি সচরাচর ইন্টারনেট দেখে যা-তা একটা বলে দেই। কিন্তু ধরা খেলাম নিজেরটা কিনতে গিয়ে। একটা ভালো ক্যামেরা কেনা আসলেই কঠিন!

আমি বিশেষজ্ঞ নই। তবে কিছু টিপস দেবার লোভ সামলাতে পারছি না।

ক্যামেরা পড়ে, আপনি আগে
—————————————-
কোন কিছু বলার আগে বলে নেই, ভালো ছবি ক্যামেরার জন্য হয় না, ক্যামেরা কিনতে হলে”>ক্যামেরা পিছনের মানুষটির জন্য হয়। যদিও ফোটোগ্রাফীর কারিগরি দিক সম্পর্কে বেশ ভালো জানলে কিছু কেরামতি করা সম্ভব। এখনকার প্রায় সব ক্যামেরাই ভালো ছবি তোলা উপযুক্ত!

আগে ঠিক করুন কি চান ঃ এসএলআর না কমপ্যাক্ট
—————————————-
ক্যামেরার ভালো মন্দ আসলে আপনার হাতে। আপনি ফোটোগ্রাফী পাগল হলে এসএলআর ভালো লাগা স্বাভাবিক। আবার বাইরে বেড়াতে গিয়ে টুকটাক ছবি তোলার ধান্দা থাকলে, হালকা পুলকা ছোট একটা কমপ্যাক্ট ক্যামেরাই হয়তো পছন্দ হবে আপনার। তাই মন ঠিক করুন। এসএলআর সাইজে বড়, চালানো জটিল, কারিগরি বিষয় না জানা থাকলে বিপদে পড়বেন। কমপ্যাক্ট ক্যামেরা ছোট সাইজের, টিপ দিলেই ছবি উঠবে, সোজা সাপ্টা ব্যবহার। এসএলআর ক্যামেরার মাহত্ব্য তখনই ধরা দেবে যখন আপনি কারিগরি দিক সম্পর্কে ভালো জানবেন। আইএসও স্পীড, শাটার স্পীড আর অ্যাপারচার কমা-বাড়ার অর্থ যদি আপনি না বুঝেন তাহলে এসএলআরের কথা ভুলে যান। পরবর্তী অংশে আরও বিশদ ভাবে দেখব এটা।

মেগা পিক্সেল ম্যানিয়া
—————————————-
সেদিন একভদ্রলোকের বাড়ি ডিনারে গেছি। কার একটা ক্যামেরা দেখে উনি প্রথম সুধালেন কতো মেগাপিক্সেল। মানতেই নারাজ যে আরও কিছু বিষয় আছে ক্যামেরার কদর করার। মেড়াপিক্সেল এক সময় বেশ গুরুত্বপূর্ন ছিল। তখন ডিজিটাল ক্যামেরার কেবল জন্ম হয়েছে। আমার প্রথমটা ছিলো 0.85 মেগা পিক্সেল! সময়ের সাথে সাথে এখন 10/12 মেগা পিঙ্লে বাজারে হাজির হয়েছে। সত্যি বলতে 5 মেগা হলেই যথেষ্ট। যতো বেশী মেগা পিক্সেল ততো বড়ো প্রিন্ট আউট নেওয়া যাবে। ছবির কোয়ালিটির সাথে এর কোনই সম্পর্ক নেই। 5 মেগাপিক্সেল এ বেশ ভালো 12 বাই 18 ইঞ্চি প্রিন্ট নেওয়া যায়। 90% মানুষ এর বাইরে ছবি বড়ো করেন না। তাই ক্যামেরা কিনতে গিয়ে মেগা পিক্সেল নিয়ে না ভাবাই ভালো, কারন এখন 5 প্রায় স্ট্যানডার্ড হয়ে গেছে।

ভেবে দেখুন ঃ ব্র্যান্ড না প্র্যাকটিক্যালিটি
—————————————-
ক্যামেরা কিনতে গিয়ে অনেকেই সনি কিনে ফেলেন। সনি খুবই ভালো ক্যামেরার একটা। কিন্তু এর অ্যাকসেসরি গুলোর দাম বেশী এবং আনকমন। তাই কেনার আগে দেখা দরকার আপনি ব্যান্ড দেখে কিনবেন না, সহজে ও সুলভে অ্যাকসেসরি পাওয়া যায় এমন প্র্যাকটিকাল ক্যামেরা কিনবেন। আমি ক্যানন পাওয়ার শট এসটু আই এস কিনেছিলাম কারন ঃ এটা সাধারন 4টা ডাবল-এ ব্যাটারীতে চলে আর ছবি স্টোর করেত সুলভ এসডি কার্ডে । বাজারে অনেক চমৎকার ক্যামেরা আছে যেগুলো স্পেশাল ব্যাটারী ছাড়া চলে না, চিন্তা করুন ব্যাটারী নস্ট, আপনার ক্যামেরাও বেকার! আবার ধরুন ফুজি আর সনির কথা, ফুজি এক্স-ডি কার্ড (এসডি নয়) আর সনি মেমোরী স্টিক ব্যবহার করে। এদুটোই বেশ দামী আর পাওয়া যায় কম। পক্ষান্তরে এসডি কার্ড খুবই সস্তা, 1গিগা কিনলাম সেদিন মাত্র 2500টাকা দিয়ে! এসডির মতো সিএফ কার্ডও বেশ সস্তা-সুলভ, তবে ওপথে না গেলেই ভালো।

ঝাপসা ছবি না চাইলে
—————————————-
আলো কম থাকলে, জুম করলে কিংবা শরীর কাপলে ছবি ঝাপসা হয়ে যায়। শখের ছবি কে ঝাপসা দেখতে চায় বলুন? তাই দুটো জিনিস মাথায় রাখতে হবেঃ হাই আইএসও স্পীড আর ইমেজ স্ট্যাবিলাইজেশন। আমার টার আইএসও স্পীড মাত্র 400। নতুন গুলো 800 থেকে 1000 হয়ে থাকে। এটা যতো বেশী হবে ক্যামেরা ততো বেশী কম আলোতে ভালো ছবি তুলতে পারবে। তার মানে কি? রাতে স্ট্রীটল্যাম্পের আলোয় কিংবা সূর্যাস্তের পর আধো অন্ধকারে ফ্ল্যাশ ছাড়াই ন্যাচারাল ছবি তোলা যাবে। ফ্ল্যাশ না জ্বেলে তুললে যে ছবি অনেক সুন্দর হয় তা সবারই জানা। হাই আইএসও স্পীড এ সাটার স্পীডও বেশী দেওয়া যায়। তাই কম আলোতেও বেশী সাটার স্প ীডে ছবি তুললে ঝাপসা হবার সম্ভাবনা কমে যায়। ইমেজ স্ট্যাবিলাইজেশন আরেকটি গুরুত্বপূর্ন ফীচার। জুম করে বা কম আলেতে ছবি না তুললে এটার মহিমা বোঝা যাবে না। ইমেজ স্ট্যাবিলাইজেশান থাকলে, ক্যামেরা হালকা কেপে গেলেও ছবি ঝাপসা হয় না (অবশ্যই একটা সীমার মধ্যে)। ক্যানন আইএস, প্যানাসনিকের (লুমিক্স) মেগাওআইএস আর সনির স্টেডিশট ফীচার ইমেজ স্ট্যাবিলাইজেশনে র নিশ্চয়তা দেয়।

বেশী জুম বেশী মজা
—————————————-
জুম হল এমন একটা ফীচার যা মোটামুটি সবাই ব্যবহার করতে পারে। ক্যামেরা কিনলে অপটিক্যাল জুম দেখে নেবেন। ডিজিটাল জুম কাজের না। অনেক ক্যামেরায় অপটিক্যাল আর ডিজিটাল গুন করে মোট জুম লেখা থাকে। ধরা খেতে পারেন তখন। মনেকরে অপটিক্যাল জুম দেখে নিন। এখন 12এক্স অপটিক্যাল জুম পাওয়া যায়। যতো বেশী জুম থাকবে, দূরের বস্তু ততো কাছে দেখা যায়। পাখির ছবি তোলার জন্য জুম কিংবা দূর থেকে কোন কিছুর ছবি তুলতে জুম খুবই কাজে দেয়। জুম লেন্স এ ছবি তোলা মজাই আলাদা। পারলে কমপক্ষে 8এক্স জুম ওয়ালা ক্যামেরা কিনুন।

ম্যানুয়াল কন্ট্রোলের কেরামতি
—————————————-
এসএলআর ক্যামেরায় ম্যানুয়াল কন্ট্রোল থাকে। তার অর্থ আপনি শাটার স্পীড (কতক্ষন ধরে সেনসরে আলো পড়বে), অ্যাপারচার (কি পরিমান আলো সেনসরে পড়বে), আইএসও স্পীড (সেনসরের সংবেদনশীলতা), ফোকাস এসব নিজের মতো বদলাতে পারবেন। কমপ্যাক্ট ক্যামেরায় এসব ক্যামেরা নিজেই ঠিক করে আপনি টেপা ছাড়া কিছু করেন না। সাধারন কাজের জন্য কমপ্যাক্ট ক্যামেরাই যথেষ্ট । কিন্তু আপনি যদি শাটার স্পীড আর অ্যাপারচারের কারিগরি জানেন তাহলে প্রচুর এক্সপেরিমেন্ট করতে পারবেন। যেমন আমার ক্যামেরায় কম আলোতে ছবি ঝাপসা আসছিলো। শেষে কম আইএসও-তে (50) বেশী স্পীডে (6) আর কম অ্যাপারচার (2.7) সেটিং দিয়ে ঝাপসা হওয়া বন্ধ করালাম। এই সেটিং অটো ক্যামেরায় কখনওই আসবে না!

যারা ম্যানুয়াল কন্ট্রোলের ভক্ত তাদের দুটো পথঃ প্রোসিউমার গ্রেডের ক্যামেরায় যাওয়া না হলে রিয়েল এসএলআর এ যাওয়া। আমার ক্যানন পাওয়ার শট এসটু আইএস প্রোসিউমার গ্রেডের। বেশী বড় না, অনেক ম্যানুয়াল কন্টো্রল আর ফিঙ্ড লেনস। দাম এসএলআর এর তুলনায় কম (কমপ্যাক্টের চেয়ে ঢেড় বেশী যদিও) । রিয়েল এসএলআর হয় বেশ বড়, বিভিন্ন রকম লেনস (জুম, টেলি, ওয়াইড, ক্লোজআপ) লাগানো যায়, আলাদা ফ্ল্যাশ লাগানো যায়, প্রায় সবকিছুই ম্যানুয়ালি করা যায়, পিকচার কোয়ালিটি হয় প্রফেশনাল গ্রেডের। তবে এদের জন্য খরচ করতে হয় প্রচুর। ট্যাক ভারি না হলে ওপথে যাওয়া ঠিক নয়। ফোটোগ্রাফীর কারিগরি বিষয় না বুঝলে এসএলআর কেনান চেষ্টা করবেন না। কারন এর ব্যবহার জটিল, পকেটে নিয়ে ঘোরার মতোও না।

এলসিডি ডিসপ্লেঃ বড় না ছোট
—————————————-
আমি আমার ক্যাননের ভিউফাইন্ডারটাতেই ছবি দেখতে পছন্দ করি। আমার স্ত্রী আবার ডিসপ্লেতে না দেখে ছবি তোলেন না। আমার কাছে তাই এলসিডির সাইজ বড় না, কিন্তু আমার স্ত্রীর কাছে সেটা খুবই গুরুত্বপূর্ন। এখন 2 থেকে 2.5 ইঞ্চি এলসিডি ওয়ালা ক্যামেরা পাওয়া যায়। ছবি তোলার পর বন্ধুদের দেখানো জন্য বেশ কাজে দেয়। তবে ব্যাটারী খতম করতে এর জুড়ি নেই।

অটোফোকাস না ফিক্সডফোকাস না ম্যানুয়াল ?
—————————————-
ফিক্সফোকাস ক্যামেরা সস্তা। খারাপ নয়। তবে এদের ফোকাস করার ক্ষমতা স্থির বলে কিছু সীমাবদ্ধতা চলে আসে। অন্যদিকে অটোফোকাস ক্যামেরা নিজে নিজে ফোকাস করে। জুম লেনস ওয়ালা ক্যামেরায় এটা খুবই দরকারী। কিনলে অটো ফোকাস সহই কেনা উচিত। ম্যানুয়াল ফোকাস থাকে কেবল ভালো গ্রেডের ক্যামেরায়। আপনি এক্সপেরিমেন্ট না করতে চাইলে এটা নিয়ে ভাববার কিছু নেই।

কিছু রেকমেন্ডেড ক্যামেরা
—————————————-

প্রোফেশনাল গ্রেডঃ
ক্যানন ই.ও.এস 350ডি,
নিকন ডি70এস,
নিকন ডি 50,
সনি সাইবার শট ডি.এস.সি আর-1,
প্যানাসনিক লুমিক্স ডি.এম.সি-এফজেড-30

মহাউৎসাহী গ্রেডঃ
ক্যানন পাওয়ার শট এস-2/3 আই এস,
সনি সাইবার শট ডি.এস.সি এইচ-1,
প্যানাসনিক লুমিক্স ডি.এম.সি-এফজেড-20,
নিকন কুলপিক্স এস-4

“এমনি এমনি ছবি তুলি” গ্রেডঃ
সনি সাইবার শট ডি.এস.সি টি-9,
ক্যানন পাওয়ার শট এ520
নিকন কুলপিক্স 5600

বাংলাদেশে কোন ক্যামেরা কোথায় পাওয়া যায় জানতে চাইলে এখানে  ক্লিক করুন

Related posts